ক্যামেলিয়া গাছের শীতকালীন পরিচর্যা | Camellia plant care

 বৈজ্ঞানিক নাম- Camellia japonica

বর্তমানে যে ক্যামেলিয়া ফুলগুলি আমরা দেখে থাকি সেই ক্যামেলিয়া নামটি এসেছে জেস্যুইট পাদ্রি উদ্ভিদবিদ জর্জ ক্যামেল কামেলিয়াসের উপাধি থেকে। পরবর্তি সময়ে উদ্ভিদবিদ কার্ল লিনিয়াস ফুলটিকেক্যামেলিয়া জাপোনিকা নামে অভিহিত করেন। জাপোনিকা নামাংশটি এসেছে এনপেলবার্ট ক্যাসপার থেকে, কারন জাপানীরা এই ফুলের প্রথম বর্ণনা বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলেন। তবে সবচেয়ে গৌরবময়ী/মূল্যবান  বলা হয়আলবা প্লিনা ক্যামেলিয়াকে, তার সৌন্দর্যখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এই ফুলগুলি গোলাপ ফুলের ন্যায় দেখতে তাই এর অপর নামশীতের গোলাপ ইরেজিতে বলা হয় ‘Rose of winter’

ক্যামেলিয়ার পাতার বৈশিষ্ট অনুযায়ী দুটি প্রজাতি আছে একটি জাপোনিকা অপরটি শশাঙ্কিয়া। ক্যামেলিয়া গাছ না ছাঁটলে ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়ে যায় এবং যত্ন পরিচর্যা করলে বাঁচে অন্তত এক বছর। না কাঁটাই-ছাঁটাই করলে গাছ এত উঁচু হয় যে ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না।





চারা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে এপ্রিল মাস, শীতের মরসুমেই নার্সারিতে চারা গাছ পাওয়া যায় ,ক্যামেলিয়া গাছগুলিতে আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে কুঁড়ি তৈরী হতে শুরু হয় যা শীতকালে এবং বসন্তের শুরুতে প্রস্ফুটিত হয়।গাছটি বৃদ্ধি এবং ভাল বিকাশের পাশাপাশি সুন্দর ফুলের পেতে সারা বছর ধরে ক্যামেলিয়ার সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

ক্যামেলিয়া জন্য মাটি প্রস্তুত ও স্থান নির্বাচন:

স্থান নির্বাচন

যে কোন চারা গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক জায়গা মাটি নির্বাচন করা উচিত। নভেম্বর থেকে এপ্রিল টানা সূর্যের আলো পায় এবং গরমের সময় যেন তীব্র সূর্যের আলো না পায় এবং যেখানে জল না জমে এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। কারন গ্রীষ্মকালে তীব্র সূর্যের আলোতে পাতার কিনারা এবং আগার কচি পাতা কালো হয়ে যায় অধিক ঠান্ডা গাছের জন্য ক্ষতিকারক কিন্তু আমাদের এই আবহাওয়াতে টানা সূর্যের আলোতে গাছ রাখতে হবে।


উপযুক্ত মাটি

চারা গাছ প্রতিস্থাপন এর পূর্বে উর্বর দোআঁশ মাটি দিতে হবে এবং নিতে হবে এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা  ভার্মি কম্পোস্ট এবং নিতে হবে হাড়গুড়ো এবং নিতে হবে সিংকুচি এবং নিতে হবে পরিমাণমতো নিম খোল

 ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে

৬০% উর্বর দোআঁশ মাটি

৪০% এক বছরের পুরনো গোবর সার

এবং নিতে হবে চা চামচের দু'চামচ হাড়গুড়ো, সিংকুচি এবং নিম খোল


জল প্রয়োগ:

গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত জল দেওয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত জল দেওয়ার ফলে গাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। জন্য গাছের গোড়া পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তবেই জল দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই জল দেয়া যাবে না। বর্ষার সময় গাছ সোড়ের নিচে রেখে দিতে হবে তা না হলে গাছ মাড়া মেতে পারে বা কুঁড়ি পঁচে মেতে পারে।  গাছের পাতায় বেশি ধুলো জমলে জল দিয়ে হালকা স্প্রে করে দিতে হবে। গরম কালে সকাল অথবা সন্ধাতে গাছের গোড়ার জল দিতে হবে এবং শীতকালে সকালে জল দিতে হবে

 

সার প্রয়োগ

গাছের সঠিক বৃদ্ধি বিকাশের এর জন্য সময় মত গাছে সার প্রয়াগ করতে হবে এছাড়াও গাছে কুঁড়ি আসার আগে থেকে যত দিন না গাছে ফুল ফুঁটছে তত দিন নিয়ম করে (সঠিক মাত্রায়) জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ গাছের ক্ষেত্রেই এক মাস অন্তর অন্তর সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

যেমন ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে এক মুঠো গোবর সার , থেকে টি অনুখাদ্যের দানা( বাজারে নানা নামে অনুখাদ্যে পাওয়া যায়), চামচ হাডগুড়ো, চামচ সিংকুচি এবং হাফ চামচ নিম খোল। মার্চ, এপ্রিল মাস থেকে নতুন পাতা বার হতে শুরু করে তাই সেই সময়ে খাবার দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।

রাসায়নিক সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।গ্রীষ্মকালীন ঋতুতে ভুল করেও রাসায়নিক সার ব্যাবহার করবেন না।


পোকা
-মাকড় দমন

ক্যামেলিয়া গাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমন বেশি দেখা না গেলেও প্রতি ১৫ দিন অন্তর নিম অয়েল জলের সাথে মিশিয়ে সন্ধাতে গাছে স্প্রে করতে হবে| নিয়মিত  মাটিতে রোপণ করা গাছ বা টবের রোপণ করা গাছগুলো পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা ডিম সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ভালো। অনেক সময় পাতার নিচের ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে আবার অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্রই ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে। পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেশি হলে রাসারনিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এবং বর্ষাকালে প্রতি ১৫ দিন অন্তর যে কোন কোম্পানির ফাংগিসাইড জলের সাথে মিশিয়ে সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে । পাতার গায়ে কালো-ধূসর দাগ এবং / অথবা বাদামী দাগগুলি যদি পাতাগুলিতে দেখা যায় (যদি ক্ষত শক্তিশালী হয় তবে কাঁটা পড়ে যায়), এটি কিছু ফাঙ্গাল সংক্রমণ কারণে হয়। এর জন্য fungicides ব্যাবহার করা যেতে পারে।

 

কাঁটাই-ছাঁটাই

বিশেষ অভিজ্ঞতা না থাকলে ক্যামেলিয়া গাছের ডাল কাঁটাই-ছাঁটাই না করাই ভালো



Post a Comment

0 Comments