জবা গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা | How To Hibiscus Plant Care
শৈশবের আমরা জবা ফুল বলতে রক্ত জবা-ই জানতাম কিন্তু বর্তমানে টিস্যু কালচার এবং গ্রাফটিং কলম পদ্ধতি মাধ্যমে আমরা একাধিক হাইব্রিড জবা ফুল গাছ দেখতে পাই, যেমন ভারতবর্ষের পুনে জবা ফুল এবং ব্যাঙ্গালোর জবা গুলি খুবই আকর্ষণীয় যা আমরা বিভিন্ন নার্সারি তে দেখতে পাই এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান জবা , ক্রান্তীয় জবা ( Tropical Hibiscus ) আর সাথে আমাদের দেশী জবার বৈচিত্রও কম নয়। জবা গাছের সঠিক যত্ন এবং পরিচর্যা করলে এই ফুলের সৌন্দর্য গোলাপ ফুল কেও হার মানায়। এর মধ্য অনেক দুর্লভ রংয়ের ও আকারের জবা পাওয়া যায়। জবা এখন হয় নীল, হলুদ, কমলা, গোলাপি, সাদা, বর্ণিল জবা ও বাই-ট্রাই কালারের জবা গাছ বহু নার্সারিতে পাওয়া যায়। তবে শুধু গাছ জোগাড় করলেই হবে না, জানতে হবে টব নির্বাচন, মাটি প্রস্তুত, সার প্রয়োগ, ওষুধ স্প্রে সম্পর্কে।
জবা নানা দেশে ও অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে জবা , হিন্দিতে গুরহল ও জবাকুসুম, হাইতি তে রোস কায়েন ( rose kayenn), ফিলিপিন্সে গুমামেলা ( Gumamela), মালয়েশিয়াতে বুঙ্গা রায়া ( Bunga Raya), এছাড়া একে চায়না রোস ( China rose), রোস মালো ( Rose mallow), হাওয়াইয়ান হিবিসকাস ( Hawaiian hibiscus), নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
➧ বৈজ্ঞানিক নাম - Hibiscus rosa-sinensis
➧ পরিবার - Malvaceae
➧ শ্রেণী - Eudicots
➧ মহাজাতি - Hibiscus
➧ উপজাতি - Hibisceae
চারা গাছ সংগ্রহ:
জবা গাছের চারা সংগ্রহের সময় আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে ভালো ও সুস্থ সবল চারা নির্বাচনের জন্য। যেকোনো নার্সারি থেকে আপনি চারা সংগ্রহ করতে পারেন, ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই আপনি উন্ন্যত মানের ভালো চারা পেয়ে যাবেন বা তার চেয়েও কমবেশি হতে পারে। অথবা Online থেকেও আপনি চারা গাছ সংগ্রহ করতে পারেন।
স্থান নির্বাচন :
জবা গাছ গ্রীষ্মমণ্ডল এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলিয় অঞ্চলে খুব ভালো হয়। কেননা জবা ১০ ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না তাই রোপণের পূর্বে সঠিক স্থান নির্বাচন আবশ্যক। শীতকালে টানা সূর্যের আলো পায় এবং গরমের সময় যেন তীব্র সূর্যের আলো না পায় এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। জবা গাছ হালকা ভেঁজা মাটি পছন্দ, তাই সমতল জমি নির্বাচন করতে হবে, গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলেও গাছ সহজে মাড়া যায় না।
টব বা পাত্র নির্বাচন :
১০ অথবা ১২ ইঞ্চির টব বা পাত্র জবা গাছের জন্য উপযুক্ত এর মানে এই নয় "বড়ো পাত্র নিলেই যে প্রচুর ফুল ফুটবে সে-রকম নয়"। বড় টব নিলে দেরিতে গাছের শেঁকড় কাঁটাই- ছাঁটাই করতে হয়, তবে আপনি চাইলে বড়ো পাত্রও নিতে পারেন।
➧ প্রথমে টবের ছিদ্র গুলোকে ইটের টুকরো/ টব ভাঙা টুকরো দিয়ে আটকে দিতে হবে
➧ ছিদ্র গুলোকে আটকে দেওয়ার পর কিছু বালি-নুড়ি টবের মধ্যে বিছিয়ে দিয়ে এক ইঞ্চি বেড তৈরি করতে হবে যাতে অতিরিক্ত জল ড্রেনেজ সিস্টেম থেকে টবের বাইরে বেরিয়ে যাবে।
মাটি প্রস্তুত করা :
মাটি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার গাছ কেমন হবে তার অনেকটা এর ওপর নির্ভর করে। ৪০% উর্বর দোআঁশ মাটি বা নার্সারি থেকে গার্ডেন সয়েল, ২০% সাদা বালি, ২০% কোকোপিট (নারকেল ছোবড়া) বা ধানের তুষ , ২০% যে কোনো কম্পোস্ট(এক বছরের পুরনো গোবর সার/ পাতা পঁচা) সার। এর সাথে নিতে হবে একমুঠো শুকনো নিমপাতা গুড়ো, যা মাটিতে থাকা জীবাণু নাশ করে ও গাছে পোকামাকড় এর আক্রমণ কম হয়। সবশেষে দু-তিন চামচ হাড়ের গুঁড়ো এবং সিংকুচি নিয়ে এবার সবগুলো ভালো ভাবে মিশিয়ে গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে।
টবে মাটি ভরা ও গাছ লাগানো :
অল্প অল্প করে মাটি টবে দিতে হবে আর হাত দিয়ে চেপে দিতে হবে তা হলে মাটির মধ্যে এয়ার গ্যাপ থাকবে না। টবে অর্ধেক মাটি ভরা হলে প্লাস্টিক থেকে চারা গাছ বার করে অর্ধেক মাটির ওপর গাছটাকে সোজা করে বসিয়ে দিতে হবে। এরপর বাকি মাটি টবে ভরে টবের কানা থেকে এক ইঞ্চি খালি রেখে টবে পরিমান মতো জল দিতে হবে। জল দেওয়ার যদি দেখেন যে- কিছুক্ষণ পর জল বেরিয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন যে টবের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক হয়েছে।
জবা গাছের কাটিং করার সময় | জবা গাছের কাটিং
এছাড়াও বর্ষাকালে বা বর্ষা পরবর্তী বৃষ্টিতে গাছের সুস্থ সবল ডাল কেটে নিয়ে মাটিতে বা টবে বসালেও গাছ হয়। ডাল বসাবার পর সব পাতা ঝরে যায়, তখন দেখে মনে হবে, গাছ মরে গেছে। কিন্তু মরেনি, আবার নতুন পাতা গজাবে।
[আরও পড়ুন: জবা গাছের কাটিং থেকে চারা তৈরির সহজ পদ্ধতি]
জবা গাছের পরিচর্যা :
শীতকালে জবা গাছের পরিচর্যা করতে টবের গাছগুলিকে সম্পূর্ণ সূর্যের আলোতে রাখতে হবে এবং গরমকালে টপ গুলিতে সকালের সূর্যের আলো পায় এবং বিকালে সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে রাখবেন দুপুরের রোদ যেন সরাসরি না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন | শীতকালে জবা গাছে খুব বেশি জলের প্রায়াজন হয় না, তবে গরমকালে টবের গাছে দিন দু বেলা জল দেওয়া খুবই প্রায়াজন। বর্ষাকালে একটু খেয়াল রাখবেন টানা বৃষ্টি হলে টব টিকে গাছসুদ্ধু কাত করেও রেখে দিতে পারেন । বৃষ্টির কিছুদিন পর পর টবের মাটি একটু খুঁড়ে দেবেন ও গাছটিকে রৌদ্রে রেখে দেবেন। বর্ষাকালের টবের গাছগুলোতে ১০ থেকে ১২ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
সার প্রয়োগ:
টবে গাছ বসানোর ১ থেকে ২ মাসের মধ্য কোন রাসায়নিক সার ব্যাবহার করা কবে না, কিছু মাস পর অল্প জৈব সার দিলে ভালো হয়। জৈব সারের মধ্য কলার খোসা, ডিমের খোসা, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি , পাতাপচা সার প্রভৃতি ব্যাবহার করা যেতে পারে । জৈব সারের পরবর্তে পটাশ সার এক চামচ গোড়ার থেকে দূরে টবের ধারে মাটিতে দিয়ে রাখতে পারেন। এছাড়া পটাশের পরিবর্তে ডি.এ.পি সারও দিতে পারেন। রাসায়নিক সার ব্যাবহারের ১৫- ২০ দিন পর যে কোন কম্পোস্ট সার মাটিতে দেওয়া যেতে পারে। শীতকালে ৭ থেকে ১০ দিন পর সরষের খৈল জল গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার গাছের জন্য বিপদজনক। গাছের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে সারাবছর ফুল পাওয়া যাবে।
[আরও পড়ুন: হাড়ের গুঁড়ো বা Bone Meal কি ?]
[আরও পড়ুন: শিং কুচি বা Horn meal কি ?]
কীটনাশক ও পোকামাকড়
জবা গাছে নানা ধরনের পোকামাকড়ের পাশাপাশি মিলিবাগ এর আক্রমণ খুব হয় তাই দেখা মাত্রই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।
মিলিবাগের হাত থেকে রেহায় পেতে কি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে
এই ভিডিওটিতে সম্পূর্ণ জানানো হয়েছে
0 Comments