Micro Nutrients বা অনুখাদ্য কি ?

গাছের জীবন ধারণের জন্য কমপক্ষে ২০টি পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন যার মধ্যে ১৭টি উপাদান গাছ মাটি থেকে গ্রহণ করে থাকে। পুষ্টি উপাদানগুলো সমপরিমাণে প্রয়োজন হয় না; কোনোটি বেশি আবার কোনোটির পরিমাণ কম প্রয়োজন হয়। তবে সবই জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যক। গাছ যে ১১টি পুষ্টি উপাদান কম পরিমাণে গ্রহণ করে থাকে তাদের অনুপুষ্টি বলে। বোরন একটি মাইকোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টি। এটি  মাটি ও উদ্ভিদ দেহে তেমন সচল নয়। মাটিতে এটা বোরেট এবং বোরেট সিলিকেট মিনারেল হিসেবে থাকে। ওপরের স্তরের মাটিতে মোট বোরনের গড় পরিমাণ সাধারণত ১০ পিপিএম হয় তবে প্রাপ্যনীয় (Available) বোরনের পরিমাণ ১ পিপিএমের অনেক কম। মাটিতে প্রাপ্যনীয় বোরনের সংকট মাত্রা ০.২০ পিপিএম এবং কোনো মাটিতে বোরনের উত্তম মাত্রা হলো ০.৪৫-০.৬০ পিপিএম। গাছের কোষ-কলায় বোরনের পরিমাণ সাধারণত ২০-১০০ পিপিএম এ পরিমাণ ১৫ পিপিএমের কম হলে ঘাটতি হয় আবার ১০০ পিপিএম বেশি হলে বিষাক্ততা (Toxicity) দেখা দিতে পারে।


উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য ১৬টি খাদ্যোপাদান দরকার। এরমধ্যে ৭টি খাদ্যোপাদান যেমন আয়রন, জিঙ্ক, বোরন, মলিবডেনাম, কপার, ম্যাঙ্গানীজ ও ক্লোরিন উদ্ভিদের খুব কম পরিমানে প্রয়োজন হয়। এই জন্য এদের অনুখাদ্য বলা হয়। খুব কম পরিমানে প্রয়োজন হলেও এর কোন একটি ঘাটতি হলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, এরফলে ফলন কমে যায়। এই সমস্যা বর্তমানে রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই দেখা যাচ্ছে।  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে লাল কাঁকুরে  মাটি অঞ্চলে জিঙ্ক, বোরন এবং মলিবডেনামের অভাব লক্ষ করা গেছে।


যে সমস্ত খাদ্য খুব সামান্য পরিমাণে উদ্ভিদের প্রয়োজন, তারাই অনুখাদ্য বা Micronutrient, যেমন সালফার (S), জিঙ্ক(Zn), বোরণ(B), মলিবডেনাম(Mo), লোহা( Fe), ম্যাঙ্গানীজ(Mn), কপার (Cu) ইত্যাদি। তথ্য অনুযায়ী, ভারতের জমিতে এইসব অনুখাদ্যের গড়পরতা ঘাটতি হল -

 

সালফার=  ৪১%

জিঙ্ক=  ৪৯%

বোরণ=  ৩৩%

মলিবডেনাম=  ১৩%

লোহা=   ১২%

ম্যাঙ্গানীজ= ৫%

কপার= ৩%

এইভাবে যদি অনুখাদ্য ক্রমাগত কমতে থাকে,তব মাটির স্বাস্থ্য অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়বে।সুতরাং এখন থেকে সাবধান হবার সময় এসেছে।


আয়রণ বা লোহার অভাব জনিত লক্ষণ :-

আয়রণের অভাব জনিত লক্ষণ প্রধানত গাছের কচি পাতায় দেখা যায়। কচি পাতায় শিরায় সবুজ কণিকার পরিমান কমতে থাকে এবং ক্রমশ হলদে হয়ে যায়। এবং পরবর্তীতে গাছের সমস্ত পাতা সবুজবর্ণ হারায়। 

জিঙ্ক বা দস্তার অভাব জনিত লক্ষণ :-

গাছের পাতার ডগা হলদেটে হয়, পাতার ডগায় মরচে পরার মতো শুকিয়ে যায়। 

বোরণ বা সোহাগার অভাব জনিত লক্ষণ:-

নতুন পাতা ছোটো সাইজের হয় গাছ বেটে হয়, ফল হলেও ফলের আঁকার ছোটো হয়। 

মলিবডেনামের অভাব জনিত লক্ষণ:-

গাছের বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহের প্রক্রিয়া বেহত হয়। এবং মাটিতে রাইজোবিয়াম জীবাণুর উৎপাদন বন্ধ হওয়ার দরুন মাটিতেও বায়ু থেকে  নাইট্রোজেন সংগ্রহ করার পক্রিয়া বেহত হয়। তার ফল স্বরূপ বয়স্ক পাতায় পাতার শিরা ঠিক থাকলেও পাতা জালি জালি টাইপের হয়। 

কপার বা তামার অভাব জনিত লক্ষণ:-

পাতা কুঁকড়ে যায় নতুন পাতা এলেও কোঁকড়ানো  হয়। গাছের ডগা ঝোপালো আকৃতির হয়েযায়। 

ম্যাঙ্গানিজের  অভাবজনিত লক্ষণ:-

ম্যাঙ্গানিজ বা খনিজ পদার্থ মাটিতে লোপ পেলে  গাছ বেসিক নিউট্রেশন যোগানের অভাবে ডাল পালা বৃদ্ধি করতে পারেনা তার দরুন গাছের শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি হ্রাস পায়। 

সোডিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ :-

সোডিয়াম এর অভাবে গাছের তৈরী করা খাদ্য ফুল ফল পর্যন্ত সঠিক ভাবে পৌছায় না তার দরুন ফুল বা ফলের সম্পূর্ণ বিকাশ হয় না এবং অপুষ্টির কারণে ছোটো অবস্থায় বা কুঁড়ি অবস্থায় ঝরে পরে। 

নিকেলের অভাবজনিত লক্ষণ :-

নিকেলের অভাবে পাতা কুঁচকে যায়, ফোলা ফোলা পাতা দেখতে পাওয়া যায়।  ফলের গায়ে বিভিন্ন দাগ দেখা যায়। 

ক্লোরিন এর অভাবজনিত লক্ষণ :-

ক্লোরিন গাছের মাটি শোধন ও জল শোধন করে যা জৈব কীটনাশক বা জীবাণুনাশক। ক্লোরিনের অভাবে গাছে বা মাটিতে বিভিন্ন জীবাণু  বা ফাঙ্গাসের আক্রমণ দেখা যায়। পাতার বিভিন্ন রকম দাগ দেখা যায়। 

Post a Comment

0 Comments