শীতের ফুল গাছের মধ্য এজেলিয়া খুবই যত্নশীল হয় | এজেলিয়া গাছের প্রতিস্থাপন ও এজেলিয়া গাছের পরিচর্যা অন্য গাছের থেকে অনেকটা আলাদাভাবে করতে হয় নয়তো গাছ মাড়াও মেতে পারে।এজেলিয়ার যত্নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হ'ল টবের উত্তম জল নিকাশি ব্যাবস্থা,উর্বর মাটি, আরামদায়ক তাপমাত্রা,হালকা শীত,বেশি আর্দ্রতা এবং অম্লতা বজায় রাখা।
পার্বত্য
অঞ্চলের ঠান্ডা আবহাওয়াতে এজেলিয়া গাছ সবথেকে ভালো হয়, শীতপ্রধান দেশে যে স্থানের
তাপমাত্রা 10 থেকে 18 ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সাথে শীতল বাতাস প্রবাহিত হয় এবং বাতাসে
আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে সেইসব অঞ্চলে এজেলিয়া গাছে প্রচুর ফুল ফুঁটতে দেখা যায়|
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, উত্তর ভারত ও পূর্ব ভারতে এই ফুলগুলি ডিসেম্বরের থেকে থেকে
মার্চ মাসের মধ্যে ফুঁটতে দেখা যায় তবে পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় সারা
বছরই ঠান্ডা আবহাওয়া কারনে সেই অঞ্চলে বারো মাস ফুল দেখতে পাওয়া যায় ।
এজেলিয়া গাছের
উচ্চতা বেশি হয়না ৫ থেকে ৬ ফুঁট দীর্ঘ এবং ঝোপের ন্যায় হয় । ১ থেকে দুই বছরের গাছের
ডাল এবং শেঁকড় কাঁটাই-ছাঁটাই না করাই ভাল
কারন দু'বছর এর গাছ বেশী লম্বা বা ঝোপ হয়
না এবং শেঁকড় মাটির গভিরে বেশি প্রবেশ করে না।অক্টোবর-নভেম্বর মাস এজেলিয়ার কুঁড়ি
তৈরীর আদর্শ সময় সেই সময়ে আপনাকে গাছের সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। রাতে গাছ
গুলিকে ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্পগুলি দিয়ে আলোকিত করতে হবে যাতে কুঁড়ি এবং কুঁড়ি গঠন
সঠিক ভাবে করতে পারে|
কোথায় পাবেন চারা?
এজেলিয়ার চারা সংগ্রহের সময় আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে ভালো ও সুস্থ সবল চারা নির্বাচনের জন্য। যেকোনো ভালো নার্সারি থেকে আপনি চারা সংগ্রহ করতে পারেন। ৭৫ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যেই আপনি ভালো চারা পেয়ে যাবেন বা তার চেয়েও কমবেশি হতে পারে। চারা ভালো না হলে ফুল নাও আসতে পারে এবং গাছ রোগে ভুগতে পারে।
এজেলিয়ার জন্য স্থান নির্বাচন ও মাটি প্রস্তুত :-
স্থান নির্বাচন :
যে কোন চারা
গাছ রোপণের পূর্বে সঠিক স্থান নির্বাচন আবশ্যক। নভেম্বর থেকে এপ্রিল টানা সূর্যের আলো
পায় এবং গরমের সময় যেন তীব্র সূর্যের আলো না পায় এবং যেখানে জল না জমে এমন স্থান
নির্বাচন করতে হবে। এজেলিয়া মৃদু আলো পছন্দ করে তবে সূর্যের সরাসরি জ্বলন্ত রশ্মি(তীব্র
রৌদ্র) গাছের জন্য বিপদজনক তা না হলে গ্রীষ্মকালে তীব্র সূর্যের আলোতে পাতার কিনারা
এবং আগার কচি পাতা কালো হয়ে পুড়ে যায় ।
গ্রীষ্মে পাতা দিয়ে তৈরী কুঁড়েঘরে এজেলিয়া গাছের জন্য বেছে নিতে হবে তাতে
গাছ ভাল এবং সুস্থ থাকবে, গরমকালে গাছে যাতে সূর্যের মৃদু আলো পায় এবং দুপুরের তীব্র
রোদ যাতে না পায় তেমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। গাছ প্রাতস্থাপনের পূর্বে জমি সমতল
না রেখে কিছুটা ঢাল করে দেবেন তাতে জল সহজে দাঁড়াবে না।
উপযুক্ত মাটি:
চারা গাছ
প্রতিস্থাপন এর পূর্বে উর্বর দোআঁশ মাটি দিতে হবে এবং নিতে হবে এক বছরের পুরনো গোবর
সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এবং নিতে হবে হাড়গুড়ো এবং নিতে হবে সিংকুচি এবং নিতে হবে পরিমাণমতো নিম খোল এবং শুকনো গাছের ছাল অথবা
চারকোল(কাঠকয়লা)।
১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে
৪০% উর্বর দোআঁশ মাটি
2০% এক বছরের
পুরনো গোবর সার
2০% ধানের
কুড়ো
১০% শুকনো
গাছের ছাল
৫% শুকনো
চা পাতা
৫% শুকনো
কলার খোসা
এবং নিতে
হবে চা চামচের দু'চামচ হাড় গুড়ো, সিংকুচি এবং নিম খোল। এজেলিয়া গাছ অ্যাসিটিক মাটি
পছন্দ করে তাই এমন ভাবে পর্টি মিক্স তৈরি করতে হবে যাতে মাটির পিএইচ লেভেল 5 থেকে
6.5 এর মধ্যে থাকে
এজেলিয়া প্রতিস্থাপনের সঠিক সময় :
চারা গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে এপ্রিল মাস, শীতের মরসুমেই নার্সারিতে চারা গাছ পাওয়া যায়। গাছটি বৃদ্ধি এবং ভাল বিকাশের পাশাপাশি সুন্দর ফুল পেতে সারা বছর ধরে এজেলিয়ার সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
জল প্রয়োগ :
গাছের গোড়ায়
অতিরিক্ত জল দেওয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত জল দেওয়ার ফলে
গাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং গাছের শেকড় বা গোড়া পঁচেও যেতে পারে। এ জন্য গাছের
গোড়ার মাটি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তবেই জল দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই জল
দেয়া যাবে না। বর্ষার সময় গাছ সোড়ের নিচে রেখে দিতে হবে তা না হলে গাছ মাড়া মেতে
পারে বা কুঁড়ি পঁচে মেতে পারে। গাছের পাতায়
বেশি ধুলো জমলে জল দিয়ে হালকা স্প্রে করে দিতে হবে। গরম কালে সকাল অথবা সন্ধাতে গাছের
গোড়ার জল দিতে হবে এবং শীতকালে সকালে জল দিতে হবে
সার প্রয়োগ
এজেলিয়া গাছে জল প্রয়োগের পাশাপাশি সার প্রয়োগও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাছে কুঁড়ি আসার আগে থেকে যতদিন গাছের ফুল না ফুটছে ততদিন গাছের গোড়ায় জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে তবে ভুল করেও গাছের গোড়ায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করবেন না।
জৈব সার হিসেবে শুকনো কলার খোসা, ডিমের খোসা, পাতা পচা সার অথবা এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট এর সাথে নিতে পারেন হাঁড় গুড়ো, সিংকুচি, নিমখোল এবং এক চামচ ডি কম্পোজ সরিষার খোল, এগুলিকে তো ভালো করে মিশিয়ে প্রতি এক মাস অন্তর এক মুঠো করে আপনারা গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে পারেন। রাসায়নিক সার গাছে ব্যবহার করলে মাটির PH এর মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে সেটি গাছের জন্য বিপদজনক। গোলাপ গাছের মত এজেলিয়া মৃদু এসিড মাটি পছন্দ করে। এজেলিয়ার পটিং- মিক্স এর PH লেভেল 5 থেকে 6.5 এর থেকে বেড়ে গেলে PH লেভেল কমাতে বা মাটির অম্লত্ব কমাতে করতে এক চামচ ফেরাস সালফেট ব্যাবহার করতে হবে। এজেলিয়ার পটিং- মিক্স এর PH লেভেল 5 থেকে 6.5 এর থেকে কমে গেলে PH লেভেল বাড়াতে বা মাটির অম্লত্ব বাড়াতে এ শামুক বা ঝিনুক এর গুঁড়ো ব্যাবহার করতে হবে।গ্রীষ্মকালীন ঋতুতে ভুল করেও রাসায়নিক সার ব্যাবহার করবেন না।
পোকা-মাকড় দমন
এজেলিয়া গাছে পোকা-মাকড়ের
আক্রমন
বেশি
দেখা
না
গেলেও
প্রতি
১৫
দিন
অন্তর
নিম
অয়েল
জলের
সাথে
মিশিয়ে
সন্ধাতে
গাছে
স্প্রে
করতে
হবে|
যেটি
দেখা
যায়
অতিরিক্ত
মাত্রায়
গাছের
গোড়ায়
জল
দেওয়ার
ফলে
অথবা
বৃষ্টির
জল
পেলে
পাতায়
কালো
ছোপ
ছোপ
দাগ
দেখা
যায়
এগুলো
সাধারণত
ফাংগাল
ইনফেকশনের
জন্য
হয়
এজন্য
প্রত্যেক
পনের
দিনে
একবার
করে
যে
কোন
কোম্পানির
ফাংগিসাইড
জলের
সাথে
মিশিয়ে
স্প্রে
করতে
হবে
|
নিয়মিত মাটিতে
রোপণ
করা
গাছ
বা
টবের
রোপণ
করা
গাছগুলো
পরীক্ষা
করে
দেখা
মাত্র
পোকা
বা
ডিম
সংগ্রহ
করে
মেরে
ফেলা
ভালো।
অনেক
সময়
পাতার
নিচের
ভাগে
পোকামাকড়
অবস্থান
করে
আবার
অনেক
ক্ষেত্রে
বয়স্ক
পাতায়
পোকামাকড়
বেশি
দিন
আশ্রয়
নেয়।
এ
জন্য
পাতা
হলুদ
হওয়া
মাত্রই
ছিঁড়ে
ফেলে
দিতে
হবে।
পোকা-মাকড়ের
উপদ্রব
বেশি
হলে
রাসারনিক
কীটনাশক
ব্যবহার
করতে
হবে।
পাতার
গায়ে
কালো-ধূসর
দাগ
এবং
/ অথবা
বাদামী
দাগগুলি
যদি
পাতাগুলিতে
দেখা
যায়
(যদি
ক্ষত
শক্তিশালী
হয়
তবে
কাঁটা
পড়ে
যায়),
এটি
কিছু
ফাঙ্গাল
সংক্রমণ
কারণে
হয়।
এর
জন্য
fungicides ব্যাবহার করা যেতে
পারে।
বাদামী দাগ দিয়ে আচ্ছাদিত শুকনো পাতাও গাছে দেখা মায় যা বোঝায় যে বায়ু তাপমাত্রা খুব বেশি, এছাড়াও অত্যধিক শুষ্ক বাতাসের কারণে সবুজ এজেলিয়া পাতাগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বিশেষত শীতকালে গরমের ঋতুতে। অত্যধিক শুষ্ক বায়ু এবং তীব্র রোদের কারনে পাতাতে বাদামী বা প্রায় কালো রূপরেখা হতে পারে।
কাঁটাই-ছাঁটাই
বিশেষ অভিজ্ঞতা না
থাকলে
এজেলিয়া
গাছের
ডাল
কাঁটাই-ছাঁটাই
না
করাই
ভালো
0 Comments