গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের পরিচর্যা

গ্যাজেনিয়া একটি শীতকালীন ফুল। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা হলেও বর্তমানে এখানের শীতকালের একট জনপ্রিয় ফুল হয়ে উঠেছে। এই ফুল গাছ টিতে শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত একটানা ফুল দিয়ে থাকে। গ্যাজেনিয়া ফুল অনেকটা সূর্যমুখীর মতো দেখতে। সাদা, লাল, কমলা, হলুদ প্রভৃতি রঙের ফুলগুলি হয়ে থাকে। পাহাড়ি এলাকায় এরা ভালো জন্মায়।





চারা সংগ্রহ:-

নার্সারি থেকে চারা গাছ সংগ্রহ করার সময় কখনোই পাতার কোনা পঁচা, পাতায় ছোঁপ-ছোঁপ  কালো দাগ, পাতায় জলের মতো দাগ অথবা কোঁকড়ানো বড়ো পাতা জাতীয় গাছ নেবেন না এগুলো সবকটি গাছের রোগ। গাছ কেনার সময় অবশ্যই নীরোগ গাছ কেনার চেষ্টা করবেন এবং নার্সারির থেকে ফুল সহ গাছ নিলে ফুল কেটে গাছ লাগাবেন অথবা ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর গাছ লাগাবেন। গাছ কেনার সময় অবশ্যই নীরোগ গাছ কেনার চেষ্টা করবেন। আর গাছ বাড়ি এনে পটিং করার আগে একবার ফাঙ্গিসাইড জলে গুলে স্প্রে করে নেবেন অথবা মার্টির সাথে অল্প পরিমান ফাঙ্গিসাইড মিশিয়ে নেবেন।


টব নির্বাচন: -

ফুল গাছের ধরণ অনুযায়ী আমাদের সঠিক আকারের পাত্র নির্বাচন করতে হবে। গ্যাজেনিয়া ফুল গাছের জন্য ছোট (6 ইঞ্চি ) বা একটু মাঝারি আকারের পাত্র (8 ইঞ্চি ) টব উত্তম। তলানিতে ছিদ্র যুক্ত টব আবশ্যক যেন বাড়তি পানি জমে না থেকে বেড়িয়ে যায়। কেননে টবে জল জমে থাকলে তা গাছের জন্য ক্ষতির কারণ। 


মাটি তৈরী :-

যে কোন গাছ থেকে বেশি পরিমাণে ফল এবং ফুল পেতে গেলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাটি প্রস্তুত | আমাদের এমনভাবে মাটি তৈরি করতে হবে যাতে আর্দতাও থাকবে অথচ জল ও দাঁড়াবে না | উর্বর দোআঁশ মাটি নিতে হবে 50 শতাংশ, ১ বছরের পুরোনো গোবরসার অথবা ১ বছরের পুরোনো  পাতা পাঁচা সার  অথবা ভার্মি কম্পোস্ট নিতে হবে 40 শতাংশ ,বালি মেশাতে হবে 10 শতাংশ (একটু মোটা দানার লাল বালি জলে ধূয়ে নিতে হবে অথবা যেমন বালি পাবেন) আর সাথে 2 চামচ নিমখোল,1 চামচ হাড়গুড়ো, 1 চামচ সিংকুচি  এর মিশ্রণ আর মাটির সাথে 2 চামচ পাতা পোড়ানো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয় ওটা যেমন গাছ কে পটাসিয়াম এর যোগান দেবে গাছ কে রোগ মুক্ত রাখবে এবং মাটিকে অম্লিক বা এসিডিক হতে দেবে না। এই উপাদানগুলিকে মাটির সাথে ভালো করে মেশানো হয়ে গেলে আমাদের গাছ টবে প্রতিস্থাপন করতে হবে |



ফুল গাছের পরিচর্যা

সূর্যের আলো:

অন্যান্য গাছ থেকে ফুল গাছের বেশি খাদ্য প্রয়োজন হয় আর সূর্যের আলো সকল ধরণের গাছের জন্যই খাদ্যের মূল উত্‍স। ফুল উত্‍পাদনে গাছের অনেক শক্তি ব্যায় হয় বলেই ফুল গাছের জন্য সূর্যের আলো বেশি দরকার হয়। তাই প্রতিদিন গড়ে ৭/৮ ঘণ্টা রোদ থাকে এমন জায়গায় থাকা ফুল গাছ অনেক বেশি ফুল দিতে সক্ষম। ফুলের গাছ ছাদে থাকলে পর্যাপ্ত রোদ পাবে আর বারান্দায় বা ঘরে থাকলে তা দক্ষিণ দিকের বারান্দায় বা জানালার পাশে রাখুন। কেননা দক্ষিণ আর পশ্চিম মুখী বারান্দায় বা জানালায় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ থাকে।



গাছের খাবার প্রয়োগ :

গাছ লাগানোর 15 দিন পর থেকে মাসে দুইবার 1 লিটার জলে 250 গ্রাম সরিষার খোল 7 থেকে 10 দিনের জন্য ভিজিয়ে রাখে হবে , খোঁল জল গাছে দেওয়ার দিনে তিন মুঠো মতো বাসী গোবর ও এক মগ ভাতের ফেন মিশিয়ে এক কাপ করে দেবেন। আর কোনো রাসায়নিক সার এর প্রয়জোন হবে না | 


বেশি ফুল পাওয়ার জন্য:-

গাছের গ্রোথে আপনি যখন সন্তুষ্ট তখন বেশি ফুল পাওয়ার জন্য 15 দিনে একবার 6 ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে 6 থেকে 8 র্টি DAP দানা টবের সাইড  দিয়ে দিতে পারেন অথবা খোঁল জল গাছে দেওয়ার দুদিন আগে অথবা 48 ঘণ্টা আগে 6 ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে 6 থেকে 8 র্টি DAP দানা জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন ,খোঁল জল গাছে দেওয়ার সময় DAP জল একত্রে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় 15 দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করবেন তাতে উপকার আরো বেশি পাবেন


রোগ বালাই প্রতিকার:-

4 ml নিম তেল 1 লিটার জলের সাথে মিশিয়ে প্রত্যেক 15 দিন অন্তর অন্তর বিকাল বেলায় গাছে স্প্রে করতে হবে |


ছত্রাক.থেকে বাঁচানোর জন্য মাসে একবার সকালে রোদের তাপ বাড়ার আগে Fungicide স্প্রে করতে পারেন ( SAAF বা Bavistin )| গাছে নিয়মিত ফাঙ্গিসাইড স্প্রে না করাই ভালো বর্ষা কালে এর প্রয়োজনীতা বেশি |


সাদামাছি কালোজাপ অথবা মিলিবাগ এর জন্য Actara Insecticide or Admire Insecticide আর নিমতেল এক সাথে মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করতে পারেন |


পাতা খাওয়া পোকা রোধ করার জন্য মাটিতে হাফ চামচ ফুরাডান আর গাছে Rogor, Kaka, Ustad এই জাতীয় পেস্টিসাইড স্প্রে করতে পারেন। 


Post a Comment

0 Comments