টবে পলাশ গাছের পরিচর্যা | Butea monosperma plant care

পলাশ ফুল গাছ ভারতবর্ষ সহ বাংলাদেশ,মায়ানমার, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, সহ পৃথিবীর নানা দেশে দেখতে পাওয়া যায়। বসন্তের শুরু থেকেই পলাশের উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়ে। 

পলাশ গাছের ডাল খুব নরম সহজেই ভেঙে যায়,তাই ইংরেজীতে একে বলে Bastard teak. – সংস্কৃতে বলে - পলাশ/কিংশুক, হিন্দীতে বলে – ধাক পলাশ, তেসুকাপেড়, চিরা। নেপালে বলে – পলাশী বুলচেত্র। ইংরেজিতে Parrot tree, Bastard Teak, ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। 

পলাশ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma । এটি মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। তবে পলাশ গাছ তার ফুলের সন্দর্যের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি আগুনরাঙা পলাশের রূপ কার না ভালো লাগে! এই ফুলের আরো একটা নাম আছে “অরণ‍্যের অগ্নিশিখা”। মাটিতে প্রতিস্থাপন করলে গাছটি উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে টবেও গাছটি প্রতিস্থাপন করা যায়। 

পলাশ গাছের পরিচর্যা


পলাশের ব‍্যবহার :-

পলাশের বিভিন্ন অংশ ভেষজ শিল্পে ও অন‍্যান‍্য নানা কাজে ব‍্যবহার হয়ে থাকে। পলাশ কাঠের রস – কষায়, উষ্ণ ও কৃমিনাশ হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। পলাশের ফুল – উষ্ণ এবং কুষ্ঠরােগ দূর করে এছাড়াও ফুল থেকে যে হলুদ রঙ পাওয়া যায় তা দোলের রঙ তৈরীতে কাজে লাগে। পলাশের বীজ – কণ্ডু, দদ্র ও ত্বক দোষ নাশক হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। পলাশ গাছের শিকড় দিয়ে একসময় মজবুত দড়ি তৈরী করা হতো। পলাশের পাতা দিয়ে তৈরী হয় থালা,বাটি।  এছাড়া পলাশ পাতা উদরাময় অজীর্ন,জ্বরে ব‍্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঠ,হোম ও উপনয়ন অনুষ্ঠানের উপকরণ হিসাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পলাশ অত‍্যন্ত পবিত্র একটি গাছ। হিন্দু ধর্মমতে গাছের ত্রিপত্র ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও শিবের প্রতীক। এছাড়াও সরস্বতী পুজোর অন‍্যতম প্রধান উপকরণ এই পলাশ ফুল।

স্থান নির্বাচন :-

গাছটি মোটামুটি দিনে ৪ থেকে ৬ ঘটা রৌদ পাই তেমন নির্বাচন করা উচিত, এতে গাছের বাড়বাড়ন্ত ভালো হয় এবং রোগে আক্রান্ত কম হয়। গাছ টবে বসানোর ৭-৮ মাস পরেই ফুল আসা শুরু হয়। 'পলাশ' বর্ধনশীল কাষ্টল উদ্ভিদ। সুনিষ্কাশিত যে কোনো ধরনের মাটিতেই এই উদ্ভিদ জন্মায় তবে গাছ প্রাতস্থাপনের পূর্বে জমি সমতল না রেখে কিছুটা ঢাল করে দেবেন তাতে জল সহজে দাঁড়াবে না। এই গাছের জন‍্য উচ্চ জল নিকাশি ক্ষমতাসম্পন্ন মাটি দরকার হয় যাতে মাটিতে কোনভাবেই জল না দাঁড়ায়। 

উপযুক্ত মাটি (১০ থেকে ১২ ইঞ্চি টবের ক্ষেত্রে)

চারা গাছ প্রতিস্থাপন এর পূর্বে উর্বর দোআঁশ মাটি দিতে হবে এবং নিতে হবে নদীর সাদা বালি, এক বছরের পুরনো গোবর সার অথবা  ভার্মি কম্পোস্ট এবং নিতে হবে হাড়গুড়ো এবং নিতে হবে সিংকুচি এবং নিতে হবে পরিমাণমতো নিম খোল।

একভাগ গার্ডেন সয়েল(উর্বর দোআঁশ মাটি), একভাগ নদীর সাদা বালি(river sand/silver sand), একভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো গোবর সার বা পচানো পাতা পচা সার। পরিমান মতো হাড়গুড়ো,সিংকুচি ও নিম খোল মোশেতে হবে।
অথবা 

দু ভাগ ইঁট ভাটার রাবিশ(দু মিমি চালুনি দিয়ে চেলে নিতে হবে), একভাগ নদীর সাদা বালি এবং তিন ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতা পচা সার।পরিমান মতো হাড়গুড়ো,সিংকুচি ও নিম খোল মোশেতে হবে। 

গাছিটিকে টবে প্রতিস্থাপনে পরে পর্যাপ্ত পরিমানে টবে জল দিতে হবে

আলোর ব্যবস্থাপনা :–

প্রতিস্থাপনের পর দু থেকে তিন গাছিটিকে দিন একটু ছায়াযুক্ত জায়গায় আর রাত্রে খোলা আকাশের নীচে রেখে দিতে হবে। তারপর থেকে সরাসরি সূর্যের আলো পায় এমন স্থানে টবটিকে রাখতে হবে।

জলের ব্যবস্থাপনা:–
পলাশ গাছের জলের চাহিদা খুব বেশি হয় না। তবে গরমকালে প্রত্যক গাছেই জলের চাহিদা বেশি থাকে সেই বুঝে গাছে জল দেবন । গাছে একবার জল দেওয়ার পর যতদিন না মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে ততদিন জল দেবার প্রয়োজন নেই। মাটি শুকিয়ে গেলে আবার মগ ভরে জল দিতে হবে। বর্ষাকালে গাছটিকে সাবধানে রাখতে হবে ।

খাবারের ব্যবস্থাপনা :–


পলাশ গাছে খাবারের চাহিদা মোটামুটি। তবে নভেম্বর, ডিসেম্বর মাস থেকে গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা  শুরু করে দিতে হবে তা না হলে বসন্তের প্ররম্ভে রিক্ত পলাশের কোল জুড়ে আসা সহস্র রক্তিম পলাশ ফুলের বাসনা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। মাসে একবার বা দু মাসে একবার এক চামচ সরষের খোল দেওয়া যেতে পারে। গাছে ২০- ৩০ দিন অন্তর অন্তর সরষের খোল পচা জল এবং সাথে DAP দিলে ভাল সুফল পাওয়া যায়। এই গাছটিতে february  মাস থেকে ফুল ফোঁটা শুরু হয়, তাই নভেম্বর মাস থেকে প্রতিমাসে অন্তত দুবার করে গাছে খাবার দিতে হবে। এছাড়াও বছরে দু থেকে তিনবার পরিমানে জৈব সার, হাঁড় গুড়ো, শিং কুঁচি এবং পরিমাণ মতো নিম খোল গাছের গোড়ায় দিতে হবে। 

রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ :–

অন্যান্য গাছেরমতো এই গাছেও মাসে দুবার করে নিম তেল স্প্রে  করতে হবে। এতে পোকামাকড়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

গাছের কুঁড়ি আসার সময় এফিডস এর আক্রমণ হতে দেখা যায়। তাই এর জন‍্য ডাইমেথয়েড ৩০%কম্পোজিসনের যেকোন কীটনাশক রোগর,রোগর প্লাস,টাফগর এক লিটার জলে তিরিশ ফোঁটা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে দশ দিন অন্তর অন্তর।

ডাইব‍্যাক হলে শুকিয়ে যাওয়া অংশের নীচ থেকে কিছুটা কেটে দিয়ে কাটা অংশে যেকোন ফাংগিসাইড পেস্ট করে লাগিয়ে দিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments